বিশেষ প্রতিবেদক, সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর
আগামী ১৮ জুন মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়া (নৌকা প্রতীক), নির্দলীয় প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলী (ঘোড়া প্রতীক) সৈয়দ মাঈন উদ্দিন আহমেদ জুম্মান (আনারস প্রতীক), অ্যাডভোকেট ফজলুল হক (মোটর সাইকেল) এবং ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মোসাহেদ (দোয়াত কলম। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা রয়েছেন শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায়।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহনে ব্যবহার করা হবে ইভিএম। তবে ইভিএম ব্যবহারে ধারণা নেই ভাটারদের। ইভিএম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ধারণা, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হলে আওয়ামী লীগ কারচুপি করার সুযোগ পাবেনা। তাই তারা ‘বিকল্প’ হিসেবে ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসতে পারে সেজন্য বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে পারে।
গতকাল শনিবার সকালে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল বাজারে কাজল মিয়া ও হাটখোলা বাজারে মনা মিয়ার চায়ের দোকানের আলাপচারিতায় উঠে এলো নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক চিত্র। ওই দুই দোকানে আলোচনার সারমর্মটা ছিল এরকম, ‘সদর উপজেলা পরিষদের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয়নগরও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হবে। অনেকেই বলেন, দলের মনোনীত প্রার্থী জনগণের সাথে যোগাযোগ কম রেখেছেন। প্রকারান্তরে নির্দলীয় প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকায় সাধারন মানুষের মধ্যে তেমন সমালোচনা নেই, যেকারনে নতুন মুখ ভালো করতে পারে বলে ধারনা। এছাড়া ইভিএম পদ্ধতির ভোটে কোনো ধরণের কারচুপির সুযোগ নেই বলে সরকারি দল তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রে ভোটার আসতে না দেয়ার মতো কিছু ঘটাতে পারেন সরকার দলীয় লোকজন। কথা হয় সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মো. সুজনের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামীলীগ করি। তাই দলের প্রার্থীকেই ভোট দিবা। যদিও প্রার্থীর কিছু গ্যাপ ছিলো।’নাসিম ভুইয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘জনগণের সাথে যোগাযোগ কম থাকাটা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বড় গ্যাপ। এছাড়া সব দিক থেকেই তিনি ভালো।’
রিকশাচালক হিরণ মিয়া বলেন, ‘নাছিমা মুকাই আলী প্রার্থী হিসেবে ভালো। মানুষের খুব উপকার করেছে। কোনো কাজের জন্য গেলে সাহায্য করেন।
নির্বাচন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলী (ঘোড়া প্রতীক) অভিযোগ করে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার জয় নিশ্চিত। বিষয়টা আঁচ করতে পেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তানভীর ভুঁইয়ার লোকজন বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছেন। তারা আমার ভোটারদেরকে চিহ্নিত করে কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া, ভয়ভীতি দেখানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। এমনকি ইভিএম যন্ত্রটিও নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিতে চায় তানভীর ভুইয়ার লোকজন।’
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর বক্তব্যকে কাল্পনিক বলে আখ্যায়িত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ও ইভিএম যন্ত্রের ভয়ের বিষয়টি সঠিক নই।তিনি বলেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। বিজয়নগরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করবে। উন্নয়নের কারণে মানুষ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিবে। তিনি বলেন, ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। এটা ভোটের আধুনিক একটা পদ্ধতি।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মৃণাল চৌধুরী লিটন , মাহমুদুর রহমান মান্না, লিটন মুন্সি। মহিল্ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ফয়জুন্নাহার টুনি ও সাবিত্রী রায়।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৭১ হাজার ৩৬৩ জন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া প্রায় সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। পুরো এলাকাজুড়েই চলছে উৎসব আমেজ। এখানে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে পরাজিত করেছিলেন। বিজয়নগরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়ার সাথে নির্দলীয় প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
ইনাম /সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply